শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৩:৪৮ অপরাহ্ন

ভ্যাকুয়াম বোমা কী, কতটা ভয়ঙ্কর?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেইনে চলমান যুদ্ধে ভ্যাকুয়াম বা থার্মোবারিক বোমা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে; প্রাণঘাতী এই বোমা একই আকারের অন্য সাধারণ বোমার চেয়ে অনেক বেশি বিধ্বংসী, যা বিস্ফোরণের এলাকায় যে কারো ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে।

এই বোমা উচ্চ-তাপমাত্রার বিস্ফোরণ তৈরি করতে চারপাশের বাতাস থেকে অক্সিজেন শুষে নেয়। বিস্ফোরণ ঘটালে প্রচলিত বোমার তুলনায় শক্তিশালী শকওয়েভ তৈরি হয়। আর তা এতটাই প্রচণ্ড যে এটি মানবদেহকে বাষ্পে পরিণত করতে পারে।

কিন্তু এই বোমা কীভাবে কাজ করে? ভ্যাকুয়াম বোমার ব্যবহার নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন কী বলে? ইউক্রেইনে ওই বোমা আদৌ ব্যবহার হয়েছে? এর আগে কোথায় ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার হয়েছিল? এক প্রতিবেদনে এসব প্রশ্নের উত্তর তুলে ধরেছে বিবিসি।

ভ্যাকুয়াম বোমা কীভাবে কাজ করে?

ভ্যাকুয়াম বোমাকে অ্যারোসল বোমা বা জ্বালানী বায়ু বিস্ফোরকও বলা হয়। সাধারণত একটি জ্বালানির পাত্রে দুই ধরনের বিস্ফোরক চার্জ রেখে এই বোমা তৈরি করা হয়।

রকেট লঞ্চারের মাধ্যমে এই বোমা ছোড়া যায়, বিমান থেকেও ফেলা যায়। লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানলে প্রথম বিস্ফোরক চার্‌জ বোমার কনটেইনারের মুখ খুলে দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরক জ্বালানি মিশ্রণটি মেঘের মত চারদিকে বড় এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

বায়ুরোধী করে তৈরি করা হয়নি এমন যে কোনো ভবন বা প্রতিরক্ষা বূহ্যকে ভেদ করতে পারে বাতাসে ভাসমান ওই বিস্ফোরক।

তারপর দ্বিতীয় চার্জটি ওই মিশ্রণের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটায়। তৈরি হয় অসংখ্য আগুনের গোলা। বিস্ফোরণের ফলে তীব্র শকওয়েভ ছড়িয়ে পড়ে, আশপাশের বাতাসের অক্সিজেন শুষে নেওয়ায় বিস্ফেরণস্থলে তৈরি হয় এক ধরনের বায়ু শূন্য পরিস্থিতি বা ভ্যাকুয়াম।

এই অস্ত্রটি শক্তিশালী ভবন, ধাতব সরঞ্জাম ধ্বংস করতে পারে, মানুষকে হতাহত করতে পারে।

কোথায় কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার ভিত্তিতে ভ্যাকুয়াম বোমা তৈরি করা হয় ভিন্ন ভিন্ন আকারে। সৈন্যদের ব্যবহারের জন্য গ্রেনেড কিংবা হাতে বহনযোগ্য লঞ্চার থেকে ছোড়ার মত করে রকেট আকারেও তৈরি করা যায়।

আবার বিমান থেকে ফেলার জন্য বিরাট আকারের ভ্যাকুয়াম বোমাও বানানো হয়েছে, যা বিশেষভাবে গুহা ও সুড়ঙ্গের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে ব্যবহার করা হয়। আবদ্ধ জায়গায় এই অস্ত্র সবচেয়ে বেশি ধ্বংস ঘটাতে পারে।

২০০৭ সালে রাশিয়া তাদের সবচেয়ে বড় থার্মোবারিক বোমার পরীক্ষা চালিয়েছিল, এর নাম তারা দিয়েছিল ‘ফাদার অব অল বমস’

৪৪ টন সাধারণ বোমার সমতুল্য বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে কথিত ওই ‘ফাদার অব অল বমস’। পারমাণবিক বোমার বাইরে পৃথিবীর সবচেয়ে বিধ্বংসী বোমা এটি।

ধ্বংসাত্মক প্রভাব এবং ভবন ও বাংকারে থাকা সৈন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের সুবিধার কারণে ভ্যাকুয়াম বোমা প্রধানত শহুরে পরিবেশে ব্যবহার করা হয়েছে।

বিবিসি লিখেছে, ইউক্রেইন দখলের ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, কারণ রুশ সৈন্যরা এখনও দেশটির রাজধানী কিয়েভ এবং পূর্বের অন্যান্য বড় শহর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে।

ইউক্রেইনে ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করা হচ্ছে?

দেশটির রাষ্ট্রদূত ওকসানা মার্কারোভা সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেছেন, তার দেশে থার্মোবারিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে রাশিয়া।

যদিও এই দাবির সত্যতা বা আনুষ্ঠানিক কোনো স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি। তবে ইউক্রেনে থার্মোবারিক রকেট লঞ্চার দেখার খবর এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।

আন্তর্জাতিক আইন কী বলে?

কোনো আন্তর্জাতিক আইনে থার্মোবারিক অস্ত্র ব্যবহারে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। তবে মানুষের বসবাসের এলাকা, স্কুল বা হাসপাতালে বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্য করে এ অস্ত্রের ব্যবহার করা হলে ১৮৯৯ ও ১৯০৭ সালের হেগ কনভেনশনের আওতায় তা যুদ্ধাপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর করিম খান বলেছেন, তারা ইউক্রেনে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করবেন।

থার্মোবারিক বোমা এর আগে কোথায় ব্যবহৃত হয়েছে?

থার্মোবারিক অস্ত্রের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান সেনাবাহিনী প্রাথমিকভাবে এ ধরনের বোমা ব্যবহার করেছিল। তবে ১৯৬০ এর দশক পর্যন্ত এ বিস্ফোরকের ব্যাপক বিকাশ ঘটেনি। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামে এই বোমার ব্যবহার করে।

আফগানিস্তানের তোরা বোরা পাহাড়ের গুহায় লুকিয়ে থাকা আল-কায়েদা বাহিনীকে ধ্বংস করতে ২০০১ সালেও যুক্তরাষ্ট্র এ বোমার ব্যবহার করে। সেটাকে বলা হয়েছিল ‘মাদার অব অল বমস’।

রাশিয়া ১৯৯৯ সালে চেচনিয়ার যুদ্ধে এই বোমার ব্যবহার করেছিল, সেজন্য হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর নিন্দা করেছিল।

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাশার আল-আসাদের বাহিনী রাশিয়ার তৈরি থার্মোবারিক অস্ত্র ব্যবহার করেছিল।

ইউক্রেইনে চলমান যুদ্ধে সোমবার ক্লাস্টার বোমা ও ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহারের অভিযোগ উঠে রাশিয়ার ‍বিরুদ্ধে; বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভয়াবহ প্রাণঘাতী ওই অস্ত্র ব্যবহারের নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, নির্বিচারে ক্লাস্টার বোমার মত অস্ত্রের ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ। বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচারে এমন হামলা একটি ‘যুদ্ধাপরাধ’।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888